Deprecated: version_compare(): Passing null to parameter #2 ($version2) of type string is deprecated in /home/sheitefm/public_html/wp-content/plugins/elementor/core/experiments/manager.php on line 132
যুবলীগের ভালো কাজে বাহবা দিতে বাধা কোথায়? - Sheikh Mohammad Fauzul

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যুবলীগ বরাবরই একটি বড় নাম। ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে মুজিববাদ আদর্শকে পুঁজি করে যুব রাজনীতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ ফজলুল হক মনির হাত ধরে যাত্রা শুরু হওয়া এই সংগঠনটির দেশের রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগ্রাম ইতিহাসের অলি-গলি কম দেখা হয়নি। দেশের মাটিতে গণতন্ত্রের চড়াই-উতরাইয়ের পুরোটা সংগ্রামেই যুবলীগের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

কিন্তু সংগঠন হিসেবে যুবলীগের ইমেজের কথা ভাবলে, সবার চোখের সামনে একদম ধবধবে সাদা পর্দা ভেসে ওঠে না। কিছু সুযোগসন্ধানী ও বিপথগামী নেতাকর্মী বিভিন্ন সময় নিজ স্বার্থ হাসিল করার জন্য যুবলীগের ইমেজ যে নষ্ট করেছে তা অস্বীকার করবারও কোনো সুযোগ নেই। তবে যুবলীগের একজন তৃণমূল পর্যায়ের কোনো নেতাকর্মীর নেতিবাচক কর্মকান্ডের জন্য যুবলীগকে যে পরিমাণ সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় অন্যদিকে প্রতিনিয়ত যুবলীগের মাধ্যমে যে ভালো কাজগুলো হচ্ছে সেসব নিয়ে তেমন কোনো উৎসাহ কিংবা প্রশংসামূলক আলোচনা চোখে পড়ে না সচরাচর।

সাধারণ মানুষতো দূরে থাক আওয়ামী লীগ তথা যুবলীগের অনেক নেতাকর্মীই জানে না যে ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সর্বপ্রথম যে দুব্যক্তি জীবন দিয়েছিলেন তারা ছিলেন বগুড়ার যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেক খসরু এবং চট্টগ্রামের মৌলভি সৈয়দ আহমদ। এরশাদবিরোধী আন্দোলন ঠিক যেই মুহূর্তে একটি গণআন্দোলনে পরিণত হলো, সেই মুহূর্তটিও কিন্তু এক যুবলীগ কর্মীরই আত্মত্যাগে রঞ্জিত। শহীদ নূর হোসেন, যাকে আমরা সবাই চিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে, তিনি যে যুবলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন এই তথ্যটি ক’জনেরই বা জানা আছে? আর জানা নেই বলেই, যুবলীগের ইমেজ চিন্তা করলে এই সংগ্রামী আত্মত্যাগগুলো মানুষের মন এড়িয়ে যায়।

২০১৯ সালে ক্যাসিনো কান্ডে যুবলীগের ইমেজ কিছুটা হোঁচট খেলে তা পুনরুদ্ধারে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে এবং ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে মেধাবী ও রুচিশীল ব্যক্তিত্ব শেখ ফজলে শামস পরশকে চেয়ারম্যান এবং ক্লিন ইমেজের অধিকারী ও তৃণমূল মানুষের কাছে জনপ্রিয় আলহাজ মো. মাইনুল হোসাইন খান নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে।

নতুন কমিটির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পরপরই যুবলীগ সারাদেশে একের পর এক নতুন কর্মসূচি হাতে নেওয়ার মাধ্যমে অসহায় ও দুস্থ মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করে। পরশ-নিখিল যুবলীগের নেতৃত্বে আসার পরপরই সংকট কাটিয়ে যুবলীগের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে নতুন উদ্যমে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে দলটি। যাত্রা শুরু হয় নতুন এক মানবিক যুবলীগের। করোনাকালীন গরিব ও খেটে খাওয়া প্রায় ৫০ লাখ মানুষকে খাবার দিয়ে এখন অবধি সহায়তা করেছে যুবলীগ। এছাড়াও রমজান মাসজুড়ে অসংখ্য এতিমখানায় ইফতার সরবরাহ করেছে সংগঠনটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী। মহামারির সময় বোবা ও বধিরদের সাহায্যেও কাজ করছে যুবলীগ। এখন অবধি দেশের নানা প্রান্তে প্রায় ১০ লাখ মাস্ক বিতরণ করেছে যুবলীগ কর্মীরা।

অথচ, যুবলীগের বৃহৎ পরিসরে পরিচালিত এমন মানবিক কর্মকান্ডের খবর হাতে গোনা কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিজস্ব প্রোফাইল বাদে বেশির ভাগ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় আসেনি বললেই চলে। অথচ যুবলীগের যে কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থাকলে তা নিয়ে দেশের মিডিয়া, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমালোচনায় সয়লাব হয়ে পড়ে। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার তৎকালীন ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে রাতের আঁধারে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়। ঘটনা ঘটার পরপরই অভিযোগের তীর ছোড়া হয় স্থানীয় দুই যুবলীগ নেতার দিকে, খুব স্বাভাবিক ও অযাচিতভাবে সমালোচনায় বিদ্ধ হয় পুরো যুবলীগ। অথচ ঘটনার কিছু দিন পর অধিকতর তদন্তে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসে যে, কোনো যুবলীগ নেতা নয়, ওই ন্যক্ক্যারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে ইউএনওর সরকারি বাসায় মালির দায়িত্বে থাকা তার ব্যক্তিগত কর্মচারী। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের পূর্বেই যুবলীগের ইমেজকে যে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলো সমালোচনাকারীরা এর কোনো দায় নেয়নি। এরকমভাবেই বিভিন্ন ইসু্যতে ঘটনা যতটুক নেতিবাচক তার থেকে অনেক রঙ লাগিয়ে বারবার জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাই সংগঠন হিসেবে যুবলীগের ঘুরে দাঁড়াবার যে চেষ্টা ও পরিশ্রম তা বরাবরই থেকে গেছে উপেক্ষিত। ডেইলি স্টার, প্রথম আলোতে কাজ করা সাংবাদিকরা নিজদের সৎ ও নিরেপেক্ষ সাংবাদিক হিসেবে দাবি করলেও যুবলীগ ইসু্যতে বরাবরই একপেশে নেতিবাচক রিপোর্ট করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে তারা। যুবলীগের ইতিবাচক মানবিক কর্মকান্ড কখনোই তাদের সংবাদের শিরোনাম হতে পারেনি।

তাই বলে কিন্তু কর্মীরা একদমই থেমে থাকেনি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ম্যান্ডেট ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির পথে দেশকে এগিয়ে নিতে তারা তাদের সেবাদান করার ইচ্ছাকে নিয়ে গেছে ডিজিটাল দুনিয়াতেও। নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ১০০-এরও অধিক ডাক্তারের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে টেলিমেডিসিন দেয়া হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ দেশের কৃষকরা। এই চিন্তাকে বুকে ধারণ করে তাদের সাহায্যেও কাজ করছে যুবলীগ। ধানকাটা, ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে ফসলের মৌসুমে তাদের সাহায্য করছে যুবলীগের কর্মীরা। এছাড়াও বন্যার্তদের খাদ্য সহায়তা প্রদান, করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনের মতো আপাতদৃষ্টিতে সাহসী কাজেও দেখা মিলেছে যুবলীগের স্বেচ্ছাসেবক কর্মীদের। বলা বাহুল্য যে, কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিমিত্তে এসব মানবিক কার্যক্রম কোনো প্রকার আর্থিক সুবিধা ছাড়াই করে যাচ্ছে সর্বস্তরের যুবলীগ নেতাকর্মীরা।

অথচ, উলিস্নখিত এসব কর্মকান্ড যদি কোনো সাধারণ এনজিও বা মানবকল্যাণে নিয়োজিত সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান করত করোনাকালীন সময়ে, কিংবা এর সিকিভাগও যারা ইতোমধ্যে করেছে তাদের সামাজিক ও গণমাধ্যমে মানুষ যেভাবে সাদরে গ্রহণ করেছে, প্রশংসা বিলিয়েছে; যুবলীগের ভাগ্যে তার একবিন্দুও জোটেনি। অথচ এমন না যে এই প্রশংসাটুকু যুবলীগের প্রাপ্য নয়। কিন্তু মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোনো জায়গা থেকেই তেমন কোনো প্রশংসা পাননি নেতাকর্মীরা। এত সব রুচিশীল সেবাধর্মী কর্মকান্ডের পরও বারবার যুবলীগের বিভিন্ন নেতিবাচক ইসু্যকেই শুধু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু বানিয়ে সবার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে সংগঠনটিকে।

তবে, যুবলীগ কর্মীরা কিন্তু তাই বলে এই বাহবা পাওয়ার অপেক্ষায় বসে নেই। এত এত নতুন কর্মসূচির ভিড়ে তাদের এখন বসে থাকার জো নেই। আগে যেসব কর্মী নিয়মিত দলের বড় নেতাদের পিছু পিছু তোষামোদ করতে সময় ব্যয় করত, এখন তারাই মানুষের বাড়ি বাড়ি ছুটছে বিভিন্ন সাহায্য প্রকল্প নিয়ে। কারণ এটিই এখন যুবলীগের সক্ষমতা। বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রাত-দিন পরিশ্রম করে যেভাবে সেবাধর্মী কাজে নিজেদের নিয়োজিত করে রেখেছেন, দলের কর্মীদের জন্যও তা সৃষ্টি করেছে চমৎকার দৃষ্টান্ত। সেই সঙ্গে দলের বড় নেতাদের মাঠে না নেমে শুধু কর্মীদের অর্ডার দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তাও ভেঙে দিয়েছে পরশ-নিখিলের ডায়নামিক নেতৃত্ব।

এই সুস্থ প্রতিযোগিতা দলের স্থায়ী চেতনার অংশ হয়ে দাঁড়াচ্ছে দিন দিন। সেই সঙ্গে বাড়ছে সংগঠনের সক্ষমতা; কর্মীদের মধ্যে যা সঞ্চার করেছে পরিবর্তনের নতুন হাওয়া। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে যুবলীগ জায়গা করে নিচ্ছে সমাজের প্রতিটি স্তরে, প্রতিটি মানুষের মনে।

শেখ মোহাম্মদ ফাউজুল মুবিন : সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *