16
Aug

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে বিএনপি-জামায়াত সরকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। পরবর্তী সময়ে সাংবিধানিক নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যার নিমিত্তে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় চেপে বসে ক্ষমতালিপ্সু কতিপয় কুশীলব। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে শুরু হয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নির্মূলের নীলনকশা। তাদের এ দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে অন্যতম বাধা আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে এদেশের রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে শুরু হয় বিশেষ পরিকল্পনা। ২০০৭ সালে মমতাময়ী নেত্রী অসুস্থ পুত্রবধূ ও মেয়েকে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে গেলে তাকে দেশে ফিরতে বাধা দেয় তৎকালীন অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাদের এ ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে মাতৃভূমিতে ফিরে আসার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।

এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরতে এক অবৈধ নিষেধাজ্ঞা জারি করে তৎকালীন সরকার। জারিকৃত বেআইনি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে দেশব্যাপী। বঙ্গবন্ধুকন্যার ঐকান্তিক দৃঢ়তা, সাহস ও গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয়। অতঃপর শুরু হয় এক ব্যাকুল প্রতীক্ষা। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আজ থেকে ১৪ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৭ সালের ৭ মে শত প্রতিকূলতা ও গণতন্ত্র হত্যাচেষ্টার কুশীলবদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাংলাদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ লাখো জনতা তাদের হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা নিংড়ে দিয়ে সাদরে বরণ করে নেয় তাদের প্রিয় নেত্রীকে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে নির্মূলের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাকে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করে। ২০০৮ সালের ১১ জুন প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কারাবন্দি থাকলেও গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে কোনো আপস করেননি। নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও এদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের অধিকার আদায়ে ছিলেন অবিচল। কারণ তিনি জাতির পিতার কন্যা। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্টম্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত তার ধমনীতে। দেশব্যাপী নেতাকর্মীদের আন্দোলন-সংগ্রামের মুখে শেখ হাসিনাকে প্যারোলে মুক্তি দিতে বাধ্য ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিন সরকার। প্যারোলে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমন এবং চিকিৎসা শেষে ৪ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। অতঃপর তার সাহসী, দূরদর্শী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। আন্দোলনের মুখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ম্যান্ডেট নিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

এর পর দেশরত্ন শেখ হাসিনা টানা তিনবারের মতো এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এক যুগ আগে ঘোষিত রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প আজ বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকায় রাষ্ট্রের সব বিভাগেই পরিকল্পিত ও কার্যকরী উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি সুফল ভোগ করছে দেশবাসী। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার অন্যতম অর্জন যথাযথ প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করা। এর পাশাপাশি ৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্যও শেষের পথে। সেই সঙ্গে একজন বলিষ্ঠ নারী নেতৃত্ব হিসেবে নিয়মিত সম্মানিত হয়েছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ফোর্বস ২০২০ সালে সর্বশেষ প্রকাশিত বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় ৩৯তম স্থানে ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বজুড়ে শরণার্থী সংকট নিরসনে রোহিঙ্গা প্রেক্ষাপটে তার ভূমিকা এতটাই প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিক দরবারে, যা তাকে এনে দিয়েছে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাব। এ ছাড়াও তিনি জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ অর্জন করেছেন। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়ে নিজ অর্থে গড়ে তুলেছেন পদ্মা সেতু, যা এখন দেশবাসীর সামনে দৃশ্যমান। মহামারি করোনায় পৃথিবীর অনেক উন্নত রাষ্ট্র যেখানে ভীষণভাবে ভুগছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় বাংলাদেশ তা যথাযথভাবে মোকাবিলা করে চলেছে।

ফিরে আসার গল্প শেখ হাসিনার জন্য নতুন নয়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করা অবৈধ সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শত বাধা-বিপত্তি, হুমকি উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালে স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন তিনি। এ দেশের মাটির গন্ধ, বাতাসের সংস্পর্শ ও মানুষের ভালোবাসায় হারানো সব খুঁজে নিতে তিনি বারবার ফিরে এসেছেন আমাদের মাঝে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের ইতিহাস বিনির্মাণের একটি সূচনাক্ষণ হিসেবে ২০০৭ সালের ৭ মে দিনটি লিপিবদ্ধ হয়ে আছে ও থাকবে।

 

Leave A Comment