বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে টিকে থাকা এই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রতি বিএনপি’র পক্ষপাতিত্ব চোখে লাগার মতো ছিল। এর খেসারতও পরবর্তী সময়ে বিএনপিকেই দিতে হয়েছিল। যদিও সে সময়ের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ভাষ্যমতে এই ঘটনার পিছনে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হাত আছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে বলে জানা যায়।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট, বুধবার। সপ্তাহের অন্য ব্যস্ততম কার্যদিবসগুলোর মতো এ দিনটিও শুরু হয়েছিল কর্মব্যস্ততায়। আলী করিম সাহেব তার ছেলে আরেফিনকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে অফিসে যাবেন। তার স্ত্রী আফরোজা করিম তার অসুস্থ মাকে দেখতে হসপিটালের দিকে রওনা হয়েছেন। মাকে দেখে আবার আরেফিনকে স্কুল থেকে আনতে যেতে হবে। কিন্তু হসপিটাল থেকে সাড়ে ১১টার দিকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ দেখেন চারদিকে হুড়োহুড়ি। সারা দেশে নাকি বোমা হামলা হয়েছে। কারা করেছে, কেন করেছে, এখনও জানা যায়নি। করিম সাহেব অফিসে ঢুকতে না ঢুকতেই এই খবর শুনে ঘাবড়ে গিয়েছেন। অফিসের ফোন থেকে বার বার বাসায় কল দিচ্ছেন, কিন্তু কেউ ফোন ধরছে না। এ দিকে আরেফিনের স্কুল ছুটি দিয়ে দিয়েছে, কিন্তু মা এখনও আসছে না। চারদিকে চিৎকার-কান্নাকাটি, এ যেন ২৫ মার্চের কালরাতেরই পুনরাবৃত্তি।
দিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র আধাঘণ্টায় একটি দেশের জনজীবন যেন থমকে গিয়েছিল। ওই দিন বাংলাদেশের ৬৩ জেলার ৩০০টি জায়গায় প্রায় ৫০০ সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল। নিহত হয়েছিলেন দুজন নিরীহ সাধারণ মানুষ, আহত হয়েছিলেন প্রায় ১৫০ জন। পুলিশ-বিডিআরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নজর এড়িয়ে এত সুসংগঠিত আক্রমণ সবাইকে হতবাক করে দিয়েছিল।
প্রাথমিকভাবে এই ঘটনার দায় কেউ স্বীকার না করলেও পরবর্তী সময়ে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এই বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছিল। শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমানের (বাংলাভাই) নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীটি আল কায়েদার সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে হরকাত-উল-জিহাদ আল-ইসলাম (হুজি) নামের আরেকটি ইসলামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জেএমবির সঙ্গে এ ঘটনায় যুক্ত ছিল বলে গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা যায়।
২০০১ সালের শেষের দিকেই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম পরিপূর্ণরূপে সংগঠিত এবং জঙ্গিরীতিতে আক্রমণের ঘটনা ঘটা শুরু হয়। বাংলাদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা, তাদের ধর্মীয় অনুভূতি, আর্থিক অসচ্ছলতা ও ধর্মীয় নির্দেশনার ভুল ব্যাখ্যাকে পুঁজি করে মৌলবাদী জঙ্গি দলগুলো বাংলাদেশে তাদের ঘাঁটি গাড়া শুরু করে। বিশেষ করে, তালেবান ও আল কায়েদাদের সঙ্গে এ সব মৌলবাদী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা এবং বিভিন্ন উৎস থেকে প্রচুর আর্থিক ও লজিস্টিক সাহায্যপ্রাপ্ত এই জঙ্গি সংগঠনগুলো বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের তরুণ জনশক্তির মগজধোলাই করে তাদের বিপথগামী করার চেষ্টারত ছিল। আর চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ মদদে দেশের মাদ্রাসাগুলোর ওপরে ভর করে তারা সফলভাবে সমাজের গভীরে ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল।
২০০৫ সালের ২২ আগস্ট এক ওয়েব পোস্টে জেএমবি বাংলাদেশে ইসলামী শাসনের আহ্বান জানিয়ে বলেছিল যে, তারা শুধু আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সমাজব্যবস্থা দেখতে চায় এবং বাংলাদেশ সরকার যদি ইসলামের আলেম ও বুদ্ধিজীবীদের দমন করার চেষ্টা করে তবে তারা সরাসরি পদক্ষেপ নেবে বলে সতর্ক করে। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র তাদের সম্পাদকীয়তে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে। সাউথ এশিয়া ইন্টেলিজেন্স রিভিউতে বিশিষ্ট জঙ্গিবিরোধী লেখক ও গবেষক অজয় সাহানি লিখেছিলেন-“এই ধরনের একটি ষড়যন্ত্র গোয়েন্দা সংস্থার কারোরই নজরে পড়েনি, তা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।”
আওয়ামী লীগপ্রধান ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি ও চারদলীয় জোটকে বোমা হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন। হামলার পরে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি জোটের অন্তর্ভুক্ত রক্ষণশীল দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলকে দমন করতে দেশের বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে মদদ দিয়ে আসছে। আর এরই প্রভাবে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার মতো একটি অকল্পনীয় ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে টিকে থাকা এই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রতি বিএনপি’র পক্ষপাতিত্ব চোখে লাগার মতো ছিল। এর খেসারতও পরবর্তী সময়ে বিএনপিকেই দিতে হয়েছিল। যদিও সে সময়ের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ভাষ্যমতে এই ঘটনার পিছনে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হাত আছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে বলে জানা যায়।
২০০১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট যখন সরকার গঠন করেছিল, তখন হয়ত কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি যে, বাংলাদেশে উগ্র মৌলবাদ ও ধর্মান্ধতা কতটুকু বিস্তার লাভ করতে পারে। যে দেশের স্বাধীনতার অন্যতম মূল স্তম্ভই ছিল ধর্ম নিরপেক্ষতা, সেই দেশে ৬৩ জেলাজুড়ে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা যেন এক অবাস্তব দুঃস্বপ্ন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এটাই অনস্বীকার্য বাস্তবতা, যেই বাস্তবতার ঘানি দেশকে টানতে হয়েছিল অনেক বছর।
এই ঘটনার পর সারা দেশে মোট ১৫৯টি মামলা হয়েছিল, যার মধ্যে শুধু রাজধানী ঢাকাতেই ১৮টি মামলা হয়। ১৪২টি চার্জশিটে পুলিশ ১,০৭২ জনের নাম দেয়, যার মধ্যে ১৩৩ জন জামিনে আছে। ২০০৬ সালে র্যাবের বিশেষ কমান্ডো অভিযানে জেএমবির শীর্ষনেতা শায়খ আবদুর রহমান, তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানি, থিংক ট্যাঙ্ক আব্দুল আউয়াল, খালেদ সাইফুল্লাহ এবং সালাহউদ্দিনকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২০০৭ সালের মার্চে আদালতের রায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মূলত চারদলীয় জোট সরকারের বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বাস্তবিক অর্থে তাদের এহেন অপচর্চাই ওই অপশক্তি তথা জঙ্গিবাদকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে সাহায্য করে। তৎকালীন সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাদের এই কার্যক্রমের ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিল, যার মূল লক্ষ্যই ছিল আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের বা পক্ষান্তরে চারদলীয় জোট সরকারের হারানো গ্রহণযোগ্যতাকে পুনরুদ্ধার করা।
যদিও আন্তর্জাতিক অপরাধ বিশ্লেষক ও জঙ্গিবাদ সমালোচকরা চরমপন্থার বিরুদ্ধে সরকারের অকার্যকরতার তীব্র সমালোচনা করেছিল এবং সমস্যার মূলে আঘাত না করে শুধু লোক দেখানো গ্রেপ্তার বা ফাঁসি দেয়া যে বাংলাদেশের জঙ্গি গোষ্ঠীর ওপর সামান্যই প্রভাব ফেলবে এই ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। তাদের এই উদ্বেগ পরবর্তীকালে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।
২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ব্যাপক বিস্তার ঘটে। আর এই বিস্তারের পিছনে অন্যতম অনুঘটক ও পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করে চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। তারা বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী এবং সংখ্যালঘু ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করেছিল। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে হামলা, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা থেকে শুরু করে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দমন পীড়নমূলক আচরণ ছিল তখনকার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। আর এই আক্রমণগুলো মূলত জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোই গোপনে পরিচালনা করত।
এই উগ্র মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমের ফলেই আল কায়েদা হতে অনুদানপ্রাপ্ত ও অনুপ্রাণিত সন্ত্রাসী দলগুলো বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ পায়। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর তখন পর্যন্ত কোনো বিচার হয়নি। এছাড়াও দেশের একটি বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী ভারতকে বাংলাদেশের উন্নতি ও ইসলামি পদ্ধতিতে সমাজ ব্যবস্থা প্রচলনের ক্ষেত্রে মূল অন্তরায় হিসেবে বিবেচনা করত। তাই তাদের কাছে ভারতবিদ্বেষ করার মাধ্যমে ইসলামিক সমাজ ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করার এক ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস চালু ছিল। এই উগ্রবাদিতার চর্চাই ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত করেছিল।
অবশ্য চারদলীয় জোট সরকারের অনাচার ও সরকার পরিচালনায় অদক্ষতা থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ২০০৯ থেকে ক্ষমতা ধরে রাখতে সাহায্য করছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারও ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতার যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতিকে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু থেকেই সচেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। এরই ফলে বর্তমান সরকার স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’-এর ১৯৭১ সালে করা মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে।
সরকারের এই সাফল্যগুলো কিন্তু রাতারাতি নয়, বরং দীর্ঘ সময় ধরে রয়েছে। বিশেষ করে, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ আস্তানা হওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। সেই নীতি অনুসারে, তারা ২০০৯ সালে একটি ১৭ সদস্যের ‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও প্রতিরোধ বিষয়ক জাতীয় কমিটি’ গঠন করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও নিরাপত্তা সংস্থার প্রতিনিধিরা।
কমিটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় উগ্রবাদ মোকাবিলা করা এবং এই ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার চারটি চরমপন্থি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাত-উল-জিহাদ আল ইসলামী (হুজিবি), হিযবুত তাহরীর (এইচটি) এবং শাহাদাত-ই-আল হিকমাকে নিষিদ্ধ করেছে। এই পরিচিত দলগুলো ছাড়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কমিটির মাধ্যমে মনোনীত সকল সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২০০৯ সালের জুলাইয়ে সরকার বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দা কার্যক্রমের সমন্বয় সাধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আট সদস্যের একটি ‘জাতীয় গোয়েন্দা সমন্বয় কমিটি’ গঠন করে। কমিটিকে আইন প্রয়োগকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্যবিনিময়ের মাধ্যমে চরমপন্থার বিরুদ্ধে অভিযানকে আরও জোরদার করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের অর্থায়ন চিহ্নিত করা এবং অর্থের উৎস ও গতিবিধি নজরদারি করে মূল অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার উদ্দেশ্যে সরকার ২০১২ সালে মানি লন্ডারিং প্রিভেনশন অ্যাক্ট প্রণয়ন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে।
২০১০ সালে সরকার একটি শক্তিশালী জঙ্গিবাদ বিরোধী জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে, যা মাদ্রাসা পাঠ্যক্রম সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। সরকার অ্যাকাডেমিক পাঠ্য বইয়ে উগ্রবাদবিরোধী অধ্যায়ও চালু করেছে। উপরন্তু, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করে আসছে। ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও ভারত দক্ষিণ এশিয়ার সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ ও নেটওয়ার্ক ব্যাহত করার জন্য প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। এছাড়াও, বাংলাদেশ এবং ভারত একটি সমন্বিত বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান (CBMP) বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে এবং দুই দেশের সীমান্তে সন্ত্রাসসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধ করার লক্ষ্যে যৌথ টহলদারির সংখ্যা বাড়াতে সম্মত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর সন্ত্রাস দমনে পারস্পরিক সহযোগিতা, দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্যবিনিময় ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দক্ষতা বিনিময়ের উদ্দেশ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। সম্প্রতি দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতের লক্ষ্যে সার্কভুক্ত দেশগুলোকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে কাজ করতে আহবান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ২০১৪ সালের ২০ মে Conference on Interaction and Confidence Building Measures in Asia (CICA)-এর পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে যাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এশিয়া মহাদেশের শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা করা।
বাংলাদেশ ধীরে হলেও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কালো থাবা থেকে দেশের মানুষ, সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতিকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষত, আওয়ামী লীগ সরকার গত একযুগে জঙ্গিবাদের করাল থাবা থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা প্রশংসার দাবিদার। আর ধর্মীয় সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত সিদ্ধান্তগুলো উন্নত দেশগুলোর রাষ্ট্রনেতাদের কাছে প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধর্মনিরপেক্ষ সোনার বাংলার স্বপ্ন আজ এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা।
লেখক: সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ