দেশের উন্নয়নের স্বার্থে অন্যান্য দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিটি সচেতন নাগরিক জন্য একটি কাঙ্ক্ষিত বিষয়। গত ২২ ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরে দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহের আমন্ত্রণে দেশটিতে ৬ দিনের সরকারি সফরে গিয়েছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা। বিগত বাকি সফরের ন্যায় এই সফর নিয়ে উচ্ছ্বসিত দুই দেশের নাগরিক। কারণ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের নিরিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ দুই দেশের জন্যই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
মালদ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ লাখ। দেশটি তার মোট রপ্তানির মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ রপ্তানি করে বাংলাদেশে। দ্বিপাক্ষিক রপ্তানি তথা বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়ন স্বার্থে, বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম থেকে মালদ্বীপের সমুদ্রবন্দর মালে পর্যন্ত সরাসরি জাহাজ চলাচলের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ চাইছে প্রস্তাবিত রুটে যাত্রীর পাশাপাশি একই জাহাজে যেন পণ্য পরিবহনেরও সুযোগ থাকে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের মতে, চট্টগ্রাম থেকে মালদ্বীপ রুটে শুধু যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল কখনোই লাভজনক হবে না, একই জাহাজে যদি পণ্য পরিবহনের সুযোগ থাকে তবে দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণেও এর সুফল পাওয়া যাবে।
২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশি অদক্ষ শ্রমিক নেওয়া বন্ধ রেখেছে মালদ্বীপ। সে কারণে নতুন করে সম্ভবনা সৃষ্টি হওয়া এই শ্রমবাজারে যেতে পারছে না কর্মীরা। বাধ্য হয়ে ভারত থেকে প্রবাসী নেওয়া হচ্ছে। আবার প্রায় ৫০ হাজার অবৈধ শ্রমিকের বৈধ কাগজ না থাকায় এবং তাদের কষ্টার্জিত অর্থ সরাসরি মালদ্বীপের মুদ্রায় দেশে পাঠাতে না পেরে ভোগান্তি চরমে উঠেছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের। বর্তমানে এই অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকদের বৈধতা দেয়ার এবং করের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার সম্মতি দিয়েছে মালদ্বীপ। এই খবরকে ঘিরে দীর্ঘদিনের জট পাকিয়ে থাকা সমস্যার সমাধানের আশায় বুক বেঁধেছেন দেশটিতে কাজ করা প্রায় ১ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি।
অপরদিকে মালদ্বীপের অর্থনীতি চাঙ্গা হতে শুরু করেছে মূলত গত এক দশক ধরে এবং ২০১২ সালে দেশটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আর মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবার পর সেখানে ব্যাপক অবকাঠামোগত নির্মাণ শুরু হয়েছে। কিন্তু মালদ্বীপের সাগর থেকে আহরিত বালু দিয়ে নির্মাণ কাজ বা মাটি ভরাটের কাজ করা যায়না বলে দেশটিকে পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে পলিমাটি ও বালু আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের সিলেটসহ কয়েকটি এলাকার বালুর মান উন্নত বলে এগুলো নিয়ে মালদ্বীপের আগ্রহ আছে। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক ও অন্যান্য পেশাদার নেয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছে মালদ্বীপ।
এই দুই দেশের জনগণের চাওয়ার উপর ভিত্তি করে, সফরকালে দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)সহ চারটি চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েই যাত্রা শুরু হয় বঙ্গবন্ধু কন্যার। প্রস্তাবিত চারটি চুক্তি হল – আয়ের উপর কর আরোপের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ কর এড়ানো এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধের চুক্তি; বন্দীদের স্থানান্তরের চুক্তি; বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক (নবায়ন) এবং যুব ও ক্রীড়া উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একটি সফল দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শেষে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দ্বৈত কর পরিহার, বন্দী বিনিময় এবং যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইতিমধ্যেই যে তিন চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে তাতে দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রিয়া ক্ষেত্রে উন্নয়নের সাথে সাথে দীর্ঘদিন থেকে কর নিয়ে যে দ্বন্দ্ব ছিল তারও সমাধান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সফরকালে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে মালদ্বীপকে ১৩টি সামরিক যান উপহার দেয়।
বাংলাদেশ সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে চায় এবং ঢাকা সবসময় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে সাম্প্রতিক এই সফরের পর বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও কুটনৈতিক সম্পর্ক আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাক এই চাওয়াই রাখে সাধারণ জনগণ।
লেখকঃ শেখ মোহাম্মদ ফাউজুল মুবিন
সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ