দেশের ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও অনলাইনে গুজব, হয়রানি ও উসকানিমূলক সংবাদ ও বক্তব্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশ সরকারের ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ ২০১৮ সালে মন্ত্রীপরিষদে অনুমোদিত হয়। কিন্তু বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো বরাবরই সরকারকে সমালোচিত করার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে এই আইনকে। ফলে সমাজের সাধারণ মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত এই আইন এখন বাক স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবেই সর্বত্র আলোচিত সমালোচিত হচ্ছে। কিন্তু এই আইনটি যদি না থাকত বা আজ এই মুহূর্তেই যদি এই আইনকে বাতিল ঘোষণা করা হয় তাহলে এর ফলাফল কী দাঁড়াবে তা নিয়ে সচেতন মহলের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। তাই আসুন, শুধুই প্রদীপের নিচের অন্ধকারকে দিকে তাকিয়ে না থেকে নজর একটু উপরে উঠিয়ে এর আলোকিত দিকটি নিয়ে একটু পর্যালোচনা করি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ১২ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে কৃষক দলের বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ‘বিএনপির মধ্যে গণতন্ত্র নেই’ এমন বক্তব্যের জবাবে বলেন, ‘তাঁর কথায় ঘোড়াও হাসে’। তিনি আবারও ২৬ অক্টোবর দৈনিক সমকাল-এ একটি কলাম নিবন্ধে বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এখনও গণতন্ত্রের জন্য, ভোটাধিকারের জন্য লড়তে হচ্ছে। বাক স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার আর ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে।’ এখন প্রশ্ন হচ্ছে দেশে যদি বাক স্বাধীনতা নাই থাকে তাহলে তিনি এরূপ সত্য-মিথ্যার মিশেলে ও মানহানিকর বিবৃতি দেওয়ার সুযোগ পান কীভাবে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল ৭/৮ বছর ধরে বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর টকশোতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছেন। বিবিসি-তে দেওয়া তার এক বিবৃতি অনুযায়ী, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকার বাক স্বাধীনতার ওপর আঘাত করছে। তিনি আরও বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় সামাজিক নেটওয়ার্কে বা এর বাইরে কারও মন্তব্য নিয়ে যে কোন অজুহাতে তাকে আটক করে রাখা যায় এবং অহরহ এ ধরণের ঘটছে।’
কিন্তু তা সত্ত্বেও টকশোগুলোতে তার সরব উপস্থিতি কী এটাই প্রমাণ করে না যে বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের সুযোগ আছে এবং তিনি সেই সুযোগের সুফল ভোগ করে রীতিমত টকশো তারকা হয়ে নিঃশঙ্ক চিত্তে সরকারের সমালোচনা করতে পারছেন?
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘দেশে করোনার সংক্রমণের মরণ ছোবলে মানুষ যখন ভীত ও উদ্বিগ্ন তখনও মানুষের মুখ বন্ধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হিড়িক চলছে। বর্তমান নিপীড়নমূলক এই মামলা দেশের ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙেছে।‘ কিন্তু উন্নত বিশ্বের অনেক দেশই যখন করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে সরকারের দূরদর্শিতা ও সদিচ্ছার ফলে অতি দ্রুতই দেশের সর্বস্তরে বিনামূল্যে করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে। ওডাব্লিউআইডি- এর সমীক্ষা অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর, ২০২১ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬ কোটি ৮ লক্ষ ৭১ হাজার ৬৮৪ ডোজ করোনা টিকা দেয়া হয়েছে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৬.৬%। এমনকি যেই মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের টিকা প্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল সেই রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও করোনার টিকা পাচ্ছে। তা সত্ত্বেও সরকারের নামে এরূপ বিষোদগার করা অন্ধ বিরোধিতারই নামান্তর মাত্র।
বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বাক স্বাধীনতার প্রকৃত চিত্রটি বুঝতে গত এক মাস দেশী-বিদেশী টিভি চ্যানেল ও ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজের লাইভ সেশনগুলো একটু ফলোআপ করার চেষ্টা করলাম। লব্ধ অভিজ্ঞতাটি বলতে গেলে বেশ চমকপ্রদ ছিল। এই টকশো ও লাইভ সেশনগুলোতে বর্তমান সরকারকে যেরূপ অত্যাচারী ও নিপীড়নকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয় সেগুলো শুনলে মনে হয় দেশে গণতন্ত্রের নামে স্বৈরশাসন চলছে, যেকোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ঢালাও লুটপাট হচ্ছে, সরকার বিরোধী দলকে মেরে কেটে সাফ করে ফেলছে, বাক স্বাধীনতার কোন অস্তিত্বই বাংলাদেশে নেই। এইসব কথাজীবীদের মধ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, রুমিন ফারহানা, আসিফ নজরুল, ড. আকবর আলী খান, সাবেক ডাকসু ভিপি নূর প্রমুখ অন্যতম। উনাদের কাছ থেকে যুক্তিনির্ভর ও গঠনমূলক সমালোচনার কোন আশা করিনি বলে অতটা নিরাশ হইনি, কিন্তু তাদের অবাস্তব ও ভিত্তিহীন অভিযোগের ফুলঝুড়ি এবং মিথ্যার বেসাতি দেখলে অনুসন্ধিৎসু মন জানতে চায় যে, তাদের ভাষ্যমতে দেশে যদি বাকস্বাধীনতা না ই থাকে তাহলে এতদিন তো তাদের জেলের ভিতরেই থাকার কথা ছিল। কিন্তু তারা নিশ্চিন্ত চিত্তে গম্ভীর মুখ করে দিব্যি তাদের টকশো টকশো খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন সর্বত্র।
‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি’ এর সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, ২০২১ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত দেশের মোট ইন্টারনেট সুবিধাভোগী জনসংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৫৪ লক্ষ ৬০ হাজার জন, যার মধ্যে আইএসপি ও পিএসটিএন মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫০ হাজার আর মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১১ কোটি ৫৪ লক্ষ ১০ হাজার। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩০টি সাইবার ক্রাইমের মামলা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর সাইবার ক্রাইম ডিভিশনের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ডিএমপি’র ফেসবুক মেসেঞ্জার, ইমেইল ও হ্যালো সিটি অ্যাপের মাধ্যমে গত চার বছরে প্রায় ১৭,০০০ সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ এসেছে। রাজধানী ঢাকাতেই সাইবার অপরাধের এই চিত্র থেকে পুরো দেশের অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়।
এই অপরাধগুলোকে আবার মোটা দাগে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। ধরুন একটি ছেলে ও মেয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল, নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। কিন্তু ব্রেকআপের পর ছেলেটি মেয়েটিকে আগে থেকে গোপনে ধারণ করা ছবি বা ভিডিও প্রকাশের হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করলো। আবার কোন ব্যবসায়ী ভুলবশত কোন ওয়েবলিঙ্কে বা অ্যাপে ক্লিক করে ফেলার ফলে তার ব্যাংক একাউন্ট, মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস, সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট হ্যাক হয়ে গেল। আর বিকাশ বা অন্যান্য মোবাইল সেবায় ধোঁকাবাজি করে টাকা হাতিয়ে নেয়া, বিট কয়েন বা ভার্চুয়াল কারেন্সি দিয়ে ধোঁকাবাজি, ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে ধোঁকাবাজি প্রভৃতি তো অহরহই ঘটছে। এই অপরাধগুলোর সুবিধা হচ্ছে অপরাধী অনেক দূরে বসেও তার অপরাধ চালিয়ে যেতে পারে আর দক্ষতা বা পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সহজে তাদের নাগাল পায় না। এই ধরণের জঘন্য ও ধূর্ত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে শুধুমাত্র বিদ্যমান আইনই যথেষ্ট নয়, সেই সাথে প্রয়োজন আধুনিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট- এর ঢালাও সমালোচনা করার আগে এর খুঁটিনাটি সম্পর্কে সবারই ধারণা থাকা উচিত। কারণ গণতান্ত্রিক সরকারের যেকোনো আইন মূলত জনগণের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই প্রণয়ন করা হয়। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টও এর ব্যতিক্রম নয়। এই আইনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হচ্ছে-
• ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জন শৃঙ্খলা ক্ষুণ্ণ করলে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তা ব্লক বা অপসারণের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে।
• আইনে অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট যুক্ত করা হয়েছে। ফলে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করা হয়, বা প্রকাশ করে বা কাউকে করতে সহায়তা করে ওই আইন ভঙ্গ করলে এই আইনে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা হতে পারে, ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
• আইন অনুযায়ী ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার নামে প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা চালালে বা মদদ দিলে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
• ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা, ভীতি প্রদর্শক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ঘৃণা প্রকাশ, অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, প্রকাশ বা ব্যবহার করলে জেল জরিমানার বিধান রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে তিন থেকে সাত সাত বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। দ্বিতীয়বার এরকম অপরাধ করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
• কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের বিষয়েও বিধান রয়েছে এই আইনে। সেখানে ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কম্পিউটার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম. কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম বা ডিজিটাল নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার ব্যাহত করে, এমন ডিজিটাল সন্ত্রাসী কাজের জন্য অপরাধী হবেন এবং এজন্য অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড অথবা অনধিক এক কোটি অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
• ছবি বিকৃতি বা অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছেকৃতভাবে বা অজ্ঞাতসারে কারো ব্যক্তিগত ছবি তোলা, প্রকাশ করা বা বিকৃত করা বা ধারণ করার মতো অপরাধ করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ইন্টারনেটে পর্নগ্রাফি ও শিশু পর্নগ্রাফির অপরাধে সাত বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
• কোন ব্যাংক, বীমা বা আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া অনলাইন লেনদেন করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
• বাংলাদেশ বা বিশ্বের যেকোনো জায়গায় বসে বাংলাদেশের কোন নাগরিক যদি এই আইন লঙ্ঘন করেন, তাহলেই তার বিরুদ্ধে এই আইনে বিচার করা যাবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। অভিযোগ গঠনের ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে এর মধ্যে করা সম্ভব না হলে সর্বোচ্চ ৯০ কার্যদিবস পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
এরকম একটি সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করা বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যেকোনো তথ্য বা উপাত্ত যাচাই না করেই তা অনলাইনে প্রকাশের মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বা চরিত্রহনন করার অধিকার কারো নেই। শুধুমাত্র ভুল, মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে গণপিটুনিতে হত্যা, উদ্দেশ্যমূলকভাবে মানহানি বা চরিত্রহনন করা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও তৎপরবর্তী বিশৃঙ্খলার মত ন্যক্কারজনক ঘটনা অতীতে বহুবার ঘটেছে। এর ফলে এক দিকে যেমন দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটে তেমনি জানমালসহ রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই ডিজিটাল মাধ্যমে করা অপরাধকে নিয়ন্ত্রণ ও পর্যায়ক্রমে নির্মূলের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে এর মাধ্যমে অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি ও অপবাদমূলক কর্মকাণ্ডকে অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। ফেসবুক, মেসেঞ্জারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সকল ক্ষেত্রেই নারীরা সবচেয়ে বেশি সাইবার বুলিং এর শিকার হয়। এমনকি উন্নত দেশগুলোও এই সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের উত্যক্ত করা, আপত্তিকর ছবি, ভিডিও, মিম প্রভৃতি শেয়ার করে এক শ্রেণীর বিকারগ্রস্ত পুরুষ বিকৃত আনন্দ লাভ করে। এদের মধ্যে অধিকাংশই ভুয়া একাউন্ট ব্যবহার করে এই ন্যক্কারজনক কাজগুলো করে থাকে, যার ফলে তাদের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ফলে এই ধরণের অসুস্থ মানসিকতার অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। কিন্তু আইনগত ব্যবস্থা নিতে অনীহা, অনিবন্ধিত মোবাইল ও সিম সংযোগের ব্যবহার ও সামাজিক সচেতনতার অভাবে এই ধরনের অপরাধগুলোকে এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগই এই সমস্যার প্রকৃত সমাধান দিতে পারে।
কিন্তু বিশ্বের কোন আইনই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়, বিশেষ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতা ও সচেতনতার অভাবে অনেক জনহিতৈষী আইনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। সময়োপযোগী এই আইনকে ঘিরে কোনো ধরনের অব্যবস্থাপনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে সেই লক্ষ্যে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী। সেই সাথে ডিএমপি, ডিবি, সিআইডি, পিবিআই, র্যাব সহ প্রতিটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিজস্ব সাইবার ক্রাইম ইউনিট চালু করতে হবে। কারণ সাইবার ক্রিমিনালদের সাথে পাল্লা দিতে হলে অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গঠন করা অতীব জরুরী। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির আশীর্বাদপুষ্ট আমাদের আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি অত্যাবশ্যকীয় আশীর্বাদ। স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর অপপ্রচারে অযথাই শঙ্কিত হয়ে আমরা যদি একে অভিশাপ মনে করি তাহলে দিন শেষে আমরাই ভুক্তভোগী হব।
লেখক: শেখ মোহাম্মদ ফাউজুল মুবিন
সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
(সময়ের আলো ও বাংলাদেশ টুডে’তে পূর্ব প্রকাশিত)